রজত শুভ্র চ্যাটার্জি
০০৫৭
১৪৩০ কে সুস্বাগতম ।
৩০ বছর আগে, মধ্য চল্লিশেও নববর্ষের দিনে অনেক আনন্দ হত। তারও আগে একেবারে ছোটবেলার কথা খুব বেশি মনে পরে। নববর্ষ মানে দুর্গা পুজোর পরেই ছিল আমাদের সেরা উৎসব। নতুন জামা প্যান্ট একেবারে মাস্ট। মা বাবার হাত ধরে বিভিন্ন দোকানে হালখাতার খাওয়া দাওয়ার হাতছানি। সেটা প্রায় নেমন্তন্ন বাড়িতে যাওয়ার আনন্দ সমান।
সকালে, সন্ধ্যায় প্রচুর অনুষ্ঠানে যাওয়া । কোথাও নিজের কবিতা বলা, কোথাও দিদির গান শোনা । আমরা ভাইরা প্রত্যেকে কিছু না কিছু করতামই । এ সবই বাবার কাছ থেকে পাওয়া । একদিকে অনুশাসন, আরেকদিকে, ভালবাসায় শিক্ষা দান। দুটোই চলতো সমান তালে। স্কুল জীবন পর্যন্ত ভালো ছেলে ছিলাম। বিপদ বাঁধল , এর পরে – কো এডুকেশন কলেজ জীবনে । জয়সিমার মত কলার তুলে, প্রত্যেক দিনকেই মনে হত নববর্ষের দিন । নিজেকে আসলের থেকে বেশি স্মার্ট ভাবা তখন কোন ব্যাপারই ছিল না। নববর্ষ মানে নতুন বছর। কলেজ চত্বরে বিভিন্ন জটলার যে এক অমোঘ আকর্ষণ আমাকে তারিয়ে নিয়ে বেড়াতো , তাতে প্রত্যেক দিনকেই মনে হত নতুন একটা দিন।
তবু, ওই আকর্ষণও অতিক্রম করতে পেরেছিলাম , ক্রিকেটের প্রতি আমার আরো বৃহত্তর আকর্ষণকে কেন্দ্রে রেখে। নববর্ষ তখন কিছু কালের জন্য অন্তত আমার মনে দাগ ফেলতে পারেনি। কারন, তখন তো আমি টেস্ট ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে মশগুল। সেটা আবারো ফিরে এলো, যখন, এখন যিনি ঘরণী , তিনি যখন প্রেমিকা রূপে অবতীর্ণা হলেন । সত্তর দশকের গোঁড়ায় । তখন রঙ্গিন চোখে সবকিছুই নতুন। সব দিনই নতুন । যা করছি, সবই নতুন। নতুন বছর তখন আর নতুন কিছু নিয়ে আসছে না।
এর অনেক পরে, নিজে যখন বাবা হয়েছি , তখন একমাত্র পুত্রকে নিয়ে আবারো নববর্ষের দিনের আনন্দে মেতেছি। তখন, ছেলের হাত ধরে, আমি যা যা করেছিলাম, তাই আবার করতে লেগেছি। এই করে যাওয়ার মধ্যেও পেয়েছি এক অনাবিল আনন্দ । নিজের ছোট্ট শিশুকে আনন্দ দিতে গিয়ে তখন বুঝতে পেরেছি, আমার বাবা মায়ের প্রচেষ্টাকে। আমার ওই প্রচেষ্টাকে, প্রকাশ্যে না এনেও, আমার বাবা, মা আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছেন। নিশ্চিত ভাবে না হলেও, ওদের চোখের কোণে কি দু ফোটা চিকচিক করেনি ? কারন ততদিনে, নববর্ষের দিনে, বাবা, মাকে তো প্রনাম করতে শিখে গিয়েছিলাম।
বাবা , মা আজ আর নেই। প্রনাম করার মানুষও কোথায় ? একমাত্র পুত্র বহুদুরে তার কাজে ব্যাস্ত – সপরিবারে। তবু জানি ,ওই দিন ভিডিও কলে ছেলের ফোন আসবে। প্রত্যেক ছুটির দিনে যেমন আসে । নাতনিদের সাথে দেখা হবে, কথা হবে। জিজ্ঞেস করলে বলবে – উই আর গুড । হাউ আর ইউ ? ওই আনন্দই আমাদের নববর্ষ । ছেলে বউমা খোঁজ করবে, ঠিক আছি তো ? একটু আধটু বকাবকিও হয়ত করবে। তবে তা সবটাই ভালবাসার । এটা অবশ্যই স্বাপ্তাহিক প্রাপ্তি । এছারা বিশেষ কারনে ফোন তো লেগেই আছে।
মধ্য সত্তরে এসে, তাই যা পেয়েছি, যা পাচ্ছি, তাকেই যথেষ্ট বলে ভাবি । আজ, নববর্ষ আর নতুন কোন বার্তা নিয়ে আসেনা । শুধু , আশা নিয়ে ফেরে , সবাই যেন ভালো থাকে।
শুভ নববর্ষ ।