রজত  শুভ্র  চ্যাটার্জি

 আরো একটি দুর্গা পুজো । আমাদের প্রানের এক অনন্য সাধারন বার্ষিক উৎসব । বাংলায় ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা  অসংখ্য মানুষের মত,  আমিও ব্যাতিক্রম  নই এই উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে ওঠায় । মহালয়ার সাথে সাথেই যেমন পিতৃপক্ষের অবসানে, সুচনা হয় দেবি পক্ষের, আমারও আরো একবার নতুন করে পথ চলা শুরু এই সাথে।  সমস্ত গলি, নালা যখন একযোগে বন্ধ হয়ে যায়, তখনও কিন্তু মানুষ বেঁচে থাকার চেষ্টা করে,  টাটকা বাতাসে নিশ্বাস নিয়েই।  এখন থেকে নিয়মিত, আমি উপস্থিত  থাকবো  বিভিন্ন বিষয় নিয়ে । এটাই আমার টাটকা বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়া।  তোলা রইল, অদৃশ্য এক পরিসরে , ভবিষ্যতের কেউ কখনো যদি  খোঁজ করে !

Rajat Subhra Chatterjee

কখনও বাংলায়। কখনও ইংরেজিতে।

প্রথম কিস্তি, শারদীয়ার প্রাক্কালে, তাই আমার অর্ঘ – দেবী দুর্গা কে দিয়েই ।

ছোট যখন ছিলাম, কেমন ছিল আমাদের পুজো ? খুব ছোট অবস্থায় খুব বেশি কিছু  বুঝিনি। তবে একটু বড় হতেই, ভালো লাগার শুরু। প্রায় সত্তর বছর আগের ঘটনা  গুলো এখনও পর পর ফ্রেমে বাধানো । মগজের হার্ড ডিস্ক একটু আনওয়াইন্ড করতেই বেরিয়ে এলো ঠাকুরমার ঝুলি।   তারপর তো, কপি, পেস্ট ।

সরকারি চাকরির  দৌলতে ( হ্যা, তাই তো বলবো, তা না হলে, পাঁচ পাঁচটি ছেলে মেয়েকে মানুষ  করতে বাবার এবং অবশ্যই মায়ের সেই  অমানুষিক প্রচেষ্টা ভুলি  কি করে ) বাবার ছিল বদলির জাতাকল।  বিভিন্ন মহকুমা শহরের দায়িত্বে থাকতে থাকতে, বাবা কে বদলিও হতে হয়েছিল অনেকবার। কিন্তু, যে ব্যাপারটায় ছেলেবেলায় কখনো ছেদ পরেনি, সেটা হল, পুজোর সময়ে কলকাতায় আসা।  কলকাতায় আমরা পার্কসার্কাসে ঠাকুমার বাড়িতে উঠতাম । সে ছিল এক রোমাঞ্চকর সপ্তাহ আমাদের কাছে। পার্কসার্কাস ময়দানে রমেশ পালের দুর্গা প্রতিমা – সেই প্রথম দেখা। প্রতিদিন সকালে, বিকেলে, ওই তীর্থ যাত্রায় আমাদের কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সেই আমার প্রথম  বারোয়ারী পুজোর স্বাদ পাওয়া। বিশাল মণ্ডপে বসে ঠাকুর দেখা শেষ হত না। মায়ের মুখের দিকে তকিয়েই থাকতাম । এছাড়াও উপরি পাওনা ছিল, তখনকার সময়ে বিভিন্ন স্টলে থাকা অসংখ্য লোভনীয় পন্য সামগ্রী, যা আমাদের কেনার সাধ্যের বাইরে থাকলেও, মা ও ঠাকুমার আনুকুল্যে, কিছু একটা জুটে যেত ।

দশমীর সকালটা হোতো  বিষাদময়। মায়ের বিসর্জন হবে, মন ভারাক্রান্ত । অত ছোট বয়সেও চোখের কোনটা চিক চিক করত। এখন, এই তিনকুড়ি তেরো তেও হয়। আরও বেশি করে হয়। হয়ত, আর খুব বেশি দিন হবে না, এই আশঙ্কায়, নতুবা, হারিয়ে ফেলার যাতনায়।

তবু, দশমীর সন্ধ্যাটা সেই বয়েসে, আমাদের কাছে আসত এক বিশাল চাহিদা নিয়ে। আমরা সবাই রাসবিহারীতে গরিয়াহাটের মোড়ে দাঁড়িয়ে বিসর্জন শোভাযাত্রা দেখতাম আর গুনতাম, কত ঠাকুর দেখা হল।  সে এক অনির্বচনীয় আনন্দ। আলোকমালায় রঞ্জিত একের পর এক ঠাকুর আসতেন আর চলে যেতেন আর আমরা প্রনাম জানিয়ে আগামীর অপেক্ষায় থাকতাম।

পুজোয় প্রথম যেবার, হাফ প্যান্ট থেকে ফুল প্যান্ট পেলাম, সেবার মনে হল, বড় তাহলে হলাম।  তবে, বড় হবার যা জ্বালা,  তাও বুঝতে পারছিলাম। ততদিনে, ছোট বেলায় পাওয়া বারোয়ারি পুজোর স্বাদ হারিয়ে গেছে, স্বভাবিক নিয়মেই । রামকৃষ্ণ মিশনের আশ্রমে থেকে, বড় তো  হইনি, বেড়ে উঠছিলাম।  বড় হওয়া মানে, স্বাভাবিক নিয়ম কানুন কে মান্যতা দিয়ে, মা বাবার বাধ্য সন্তানের মত মানুষ হয়ে ওঠা । আমার তো আবার ওই নিয়ম কানুনের বাইরে থাকতেই  বেশি ভাল লাগতো। নিয়মের বেরাজালে আটকে না   থেকে, দুরন্ত ভাবে গজিয়ে ওঠাকেই  আমার দস্তুর মনে হয়েছে বরাবর। এটাকেই আমি মনে করেছি, বেড়ে ওঠা । খেলাধুলার প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল সেই ছোট বেলাতেই। বেড়ে উঠে, তা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেল। সেই সঙ্গে আকর্ষিত হতে থাকলাম, অন্য অনেক কিছুতেই, যার মধ্যে, অন্যতম, সমষ্টিগত ভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারছিলাম।

সময়ের আবর্তনে, ইতিমধ্যে সল্টলেকে নিজেদের আস্তানায় থিতু । দায়িত্ববান স্বামী ও একমাত্র পুত্র সন্তানের পিতা।   ঠিক এই সময়ে, আমি হয়ে গেলাম পাড়ার বারোয়ারি পুজোর সেক্রেটারি । যে দুর্গা পুজো  ছিল আমার ছোট বেলার মায়াজাল, সেই পুজোর ভার বইতে আমাকেই কি না গ্রহন করা হোল !  তখন, সেই মুহূর্তে, বুঝিনি, যে জীবনের এক চরম সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমি। অতবড়ো বারোয়ারি পুজোর নানা দিক সামলানো এক মস্ত কাজ। বাজেট তৈরি করা থেকে কোন খাতে কত খরচ,  সব হিসেব মেলান, সমষ্টিগত ভাবে সবাইকে পুজোর সমান অংশীদার করে তোলা,  এবং অবশেষে প্রতিমা নিরঞ্জন – সবটাই করে যেতে পেরেছি সকলের সাহায্যেই । ম্যান ম্যানেজমেন্ট, ম্যান পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট , ফিনান্স ও জেনেরাল  ম্যানেজমেন্ট এর যে হাতে খড়ি সেদিন আমার হয়েছিল, পরবর্তীতে, তাই হয়ে উঠেছিল আমার পাথেয় । তখন সত্যি বুঝিনি, যে পরবর্তী ৪৫ বছর আমাকে এই একই কাজ ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে  করে যেতে হবে । পরে যখন পিছন ফিরে তাকাবার সময় এলো , তখন আমার প্রথম দুর্গা পুজো দেখা, তার আঘ্রাণ নেওয়া , সেই পুজো কে ভালবাসা ও সংগঠিত করা কে মেলাতে অসুবিধে হয় নি। কারন তখন আমি, চোট খাওয়া, পোড় খাওয়া অথচ পড়ে না যাওয়া,  এক কর্পোরেট  প্রবীণ ।

দুর্গা পুজো তাই আমার কাছে আজো সমান আকর্ষণীয় – ভক্তিতে ও নিষ্ঠায় ।

8 COMMENTS

  1. It is apt to launch with Durga Puja. We reminisce our childhood. Durga Puja was also associated with sharodia books, which we used to get from Didimoni. It is coincidence that today in ABP, an article has been published on Ramesh ch Pal.

  2. শুরুটা ভালোই লাগল। পরের লেখাগুলোর অপক্ষায় রইলাম। অভিনন্দন

  3. Bah!Sholo aana Bangali…..way to go and kickstart your first…. Good luck. Very free flowing and easy to digest content.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here