রজত শুভ্র চ্যাটার্জি
০০২৯
সেটা আবার কি? নারী দিবস? আমাদের ছোট বেলায় তো কখনো শুনিনি এইসব নারী দিবস, মাদারস ডে , ফাদারস ডে। আমরা মেতে থাকতাম জন্মদিন নিয়ে। সরস্বতি পুজোর দিন নিয়ে। ভাই ফোঁটা, আর একটু বড় বয়েসে, খ্রিষ্টের জন্মদিন ও নববর্ষের সন্ধ্যাটুকু নিয়ে।
কাল বই মেলায় গিয়ে দেখলাম নারী দিবস পালিত হচ্ছে মহাসমারোহে । আমি এক উদ্দ্ব্যোগতাকে জিজ্ঞেস করলাম – কেন এই পালন? উনি এক নারী এবং বললেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস তো এক বিশেষ দিন তাই বই মেলার মত পরিসরে ভাবা গেলো এখানেই হোক । আমি বললাম, বেশ তা না হয় হোল? তবে কবে থেকে এই দিবস পালন করা হচ্ছে? উনি বললেন – এই সাত আট বছর হবে। তার মানে এর আগে নারী দিবস বলে কিছু ছিলনা ! আমার প্রশ্ন এইখানেই ।
গত কালই সল্টলেকের দুই সংগঠনের তরফে আমন্ত্রন ছিল – এক জায়গায় পঞ্চকন্যার ও আরেক জায়গায় তিন কন্যার সম্বর্ধনা – নারী দিবস উপলক্ষে । আমার উপস্থিতি ছিল একান্ত কাম্য। আমি কি ছিনু আর কি হনু হলাম যে আমার আমন্ত্রন এইরকম সম্বর্ধনায়! চেনা জানা অবশ্যই ছিল। আট আট জন নারী – প্রত্যেকেই স্বমহিমায় বিরাজিতা। আমার খুব প্রিয় চরিত্রও। প্রত্যেকের প্রতি আমার গভীর অনুরাগ ও শ্রদ্ধ্যা অটুট। তবু, আমি যাইনি কারন, অন্তর থেকে যা বিশ্বাস করি না, সেখানে সঙ সেজে বসে থাকার কোন মানে হয় না। আমার উত্তর এই খানেই ।
আচ্ছা, আমার মায়ের মুখ কি আমি একটি দিনের জন্যও ভুলে থাকি ? আমার নাতনিদের মুখ? মেয়েদের মুখ ! আমার বোনেরা এবং বোন স্থানীয়রা (বৃহৎ পরিবারেরও) আমার চোখে কি প্রায় প্রতিদিন আসেনা? নিয়ম করে হয়ত যোগাযোগ নেই তবু তো এন্টেনার যোগাযোগ আছেই। আমার পুত্রবধুর মুখ আমি কি প্রতিদিন ভাবি না ? শ্রী শ্রী মা সারদার মুখ তো প্রতিদিনই দেখি যখন ওর সামনে বসি। আর আমার বউ ! ওঁর সর্বক্ষণ পরিচালনায় আমি উঠছি , বসছি, হাঁটছি। এবং ওঁর জন্যই । এরা সব্বাই নারী । মা ছিলেন সব কিছুর আশ্রয় হয়ে। সব কিছুর প্রশ্রয় দিয়ে। সব কিছু সয়ে, মুখ বুজে হাসিতে ভরিয়ে। এখনো, প্রতিদিনই মা মাগো বলে ডেকে তো উঠি ! এখন ভাবি, মাকে তো কত কিছু দেওয়া হল না। কত কিছু দেখানোও হোলনা। মাকে তো কত কিছু খাওয়ানো হোল না। কত কিছু ! তবু তো প্রতিদিনই মায়ের মুখটা ভেসে উঠবেই । মা মানে আমি কিন্তু সব মায়েদেরই কথা বলছি। ‘আমার মা’ – প্রতিক মাত্র।
আচ্ছা, কোন মা বাবা কি শুধু ওই একটি দিনই মেয়ে বা ছেলের জন্য পালন করতে পারে ? ছেলে মেয়েরা তো আমাদের প্রতিদিনের নিত্য সঙ্গী । ওদের ভুলে একদিনও কি থাকা যায় ? আর সন্তান ! তাদের কি সারাদিনের ক্লান্ত শরীর অবসন্ন হয়ে এলেও মা বাবা কে মনে পরে না? এতো ঘটা করে উৎসব পালনের মধ্যেই কি নারী দিবস, মেনস ডে আবদ্ধ্য থাকতে পারে? নারী কে বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হলে, তাকে সন্মান করতে শিখতে হবে, শেখাতে হবে। তার উত্তরনের পথ দেখাতে হবে। নয়তো, এই দিনটির পরেই দেখা যাবে নারীদের উপর অত্যাচারের কাহিনী।
হ্যা, এই যে টেনে বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার বয়েসে এখন অন্য নারীদের প্রতি আকর্ষিত হই না, বললে, মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হবে। এই, আকর্ষণ যদিও একেবারেই অন্য মেরুর। বাড়িতে যে গৃহকর্ত্রী হিসেবে আছেন, তার ভয়ে হোক , ভালবাসায় হোক, ওমুখো হবার যো নেই। আর তেমন নারী পাচ্ছি কই ?
পশ্চিম দুনিয়া থেকে ধার করে নেওয়া কিছু দ্যোতনা হীন, ব্যাঞ্জনা বিহীন শব্দ কোষ – আমাদের হতেই পারে না । ওদের জীবনে ছোট্ট বয়েসেই মা, বাবা ভাই বোন ছাড়া হয়ে যায় । চেতনা যখন আসে, তখন ওদের মনে পড়ে , মা বাবা ভাই বোনদের। তাই ওদেরই উৎপন্ন, সৃষ্ট – দুটি শব্দ কখনো কি আমাদের হতে পারে ? আর আমরা কি তাই নিয়ে ধেই ধেই করে নাচতে পারি – না পারা উচিত ? আমার কাছে, প্রতিদিনই নারী দিবস। প্রতিদিনই মাদারস বা ফাদারস ডে ।
সব মায়েরা , বাবারা, ছেলে মেয়েরা ভালো থাকুন। সব নারী, পুরুষ ভালো থাকুন। ঈশ্বর – মহামহিমময় ।
Featured Image : Internet