রজত শুভ্র চ্যাটার্জি ।
০০৩১
কোনো কারন ছাড়াই আসল বক্ত্যব্যকে বিকৃত করে বিতর্ক তৈরিতে জুরি মেলা ভার আমাদের মি্ডিয়া কুলের । আসলে, যে যুগে খবরের কাগজে থাকতো শুধুই ইনফরমেশন আর একটা শুধু পাতা থাকতো সম্পাদকের কমুনিকেশনের জন্য, সেই যুগ কে আমরা ফেলে এসেছি বহুকাল । এখন খবর মানেই কমুনিকেশন । খবরের উপর রঙ চড়িয়ে বিতর্ক সৃষ্টির উপাদানে ভরিয়ে তবে না খবর খাওয়াতে হবে। এখন খবর কেউ পরে না। খবর খায় । প্রথম পাতা থেকে শেষ অবধি কোথাও কাগজের নিজস্ব মতামত ছাড়া কোন খবর নেই । এরা জানেই না ইনফরমেশন আর কমুনিকেশনের মধ্যের ফারাক । আমার অবশ্য কোন দায় নেই মাস্টারগিরি করার । তবে, যেটা বলার, সেটা বলে ফেলাই ভালো ।
না, না, কলেজ ঠিক করে দেবে না, কে, কি পোশাক পরবে এবং কোথায় । কলেজ বলেও নি এই কথা। কলেজ বা তার প্রিন্সিপ্যাল যা বলেছেন, সেটার বিকৃত তথ্য পরিবেশনা করা হোল । আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী, তারা কি কারনে বুদ্ধিজীবী আখ্যা পেয়েছেন, ভগবানই জানেন । সব ব্যাপারের মত, এই ব্যাপারটিকেও, ওই এক মহল, আসল বক্তব্য কে বিকৃত করে, ভেঙে নিজেদের সুবিধে মত প্রচারে নেমে এলেন। নামী সংবাদ মাধ্যমের অতি নামী চ্যানেলে ভাশন টাশন শুরু হয়ে গেল , আসল ব্যাপারটাকে গুলিয়ে দিয়ে তরুন সমাজ কে খেপিয়ে তুলতে। এটা অমার্জনীয় ।
বিষয় – অতি সম্প্রতি, দক্ষিন কলকাতার এক কলেজ প্রিন্সিপ্যাল নির্দেশ জারি করেছেন যে কলেজের ভিতর ছেঁড়া, ফাটা, ঊরু দেখানো পোশাক পরা চলবে না । তিনি একবারও বলেন নি যে ছেঁড়া, ফাটা, ঊরু দেখানো পোশাক কিম্বা তার থেকেও কদর্য পোশাকে কেউ পার্ক স্ট্রিট, বা কোন শপিং মলে যেতে পারবে না। রাস্তায় হাঁটতে পারবে না। নিজেদের আড্ডায়, পার্টিতে যে কোন পোশাকে যেতে ওই প্রিন্সিপ্যাল একেবারেই আপত্তি করেন নি। শুধু, নিজের গণ্ডির মধ্যে সজাগ ও সুজন থাকতে চেয়েছেন। সুতরাং, বুদ্ধিজীবীর যে অভিমত প্রকাশিত – “ কলেজ কি ঠিক করে দেবে কে কি পোশাক পরবে – “ ব্যাপারটা আদতে একেবারেই তা নয়।
আরো একটু বৃহত্তর পরিসরে যাওয়া যাক । এই অধম , তার দীর্ঘ কর্ম জীবনে অসংখ্য ছেলে মেয়েদের চাকরির ইন্টারভিউ নিয়েছে । বেশিরভাগই হয় ইঞ্জিনিয়ার নয়ত নামী ম্যানেজমেন্ট স্কুলের স্নাতক। বেশির ভাগই যখন ইন্টারভিউ দিতে এসেছে, যথেষ্ট শালিন পোশাকেই এসেছে । কিন্তু, যখনই কোন কেউ একটুও অশালীন পোশাকে ঢুকেছে আমার ঘরে, আমি তাকে পত্র পাঠ বিদায় জানিয়েছি । প্রত্যেক সংস্থার ব্যাক্তিগত কোড অফ কন্ডাক্ট থাকে। এবং থাকে সমষ্টিগত ভাবে শালীনতা বোধ । সেই বোধ থেকেই আমার অনুরূপ আচরন যা কিনা অনুমোদনও পেয়েছিল আমার উপরওালাদের থেকেও – সদাই। যখন যেখানে থেকেছি সর্বত্র। খুব গর্ব নিয়েই বলতে চাই, এর জন্য আমার কোন অনুতাপই নেই।
আসল ব্যাপারটা হোল কমুনিকেশন । একজন আরেজনের সাথে কমুনিকেট করতে পারেন – তার কথা, ব্যবহার, এটিটুড এবং অবশ্যই, তার পোশাকের মাধ্যমে । আমি কোন কোন ছেলে মেয়েকে যখন দেখেছি আমার ঘরে ঢুকেছে অবিনস্ত চুলে কিম্বা দামী অথচ ক্রাশড জামা কাপড়ে, আমি আরও একটু সময় নিয়েছি বিদায় করবার আগে এই বলে – যে বাপু, তোমাকে দামী জামা কাপড় পরেই ইন্টারভিউ তে আসতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সাধারন পোশাকেই চলবে। কিন্তু তা যেন থাকে পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন । এটাও একটা শিক্ষা ।
আচ্ছা, ওই ছেঁড়া , ফাটা পোশাকে কেউ কি সাহস করবে নগরের কোন নামী ক্লাবে ঢুকতে ? কিম্বা কোন সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করতে ? ভাবাই যায় না। যুগের সাথে ফ্যশন পালটায় । আমরা নিশ্চয়ই ফ্যাশন বিরোধী নই । তবে ফ্যাশন কেন আমাদের গ্রাস করবে ? ফ্যাশন আর স্টাইল দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। এক করে ফেললে চলবে না। বেশ কিছু ক্ষেত্রে যখন ছেঁড়া, ফাটা, ঊরু দেখানো পোশাক অলিখিত ভাবে বেআইনি, তখন একটি কলেজের প্রিন্সিপ্যাল কি এমন দোষ করলেন যে মিডিয়া ভাবতে পারলো যে এটা একটা খবর হতে পারে ? আসলে, আমাদের আরো অনেক ভালো কাজ হারিয়ে গেছে। ভালো খবর তৈরিতে হৃদয় নেই । তাই নেই কাজের দিকেই আমাদের মন।